মির্জা আজমের নালিশের ‘জবাব’ মুহিতের

মির্জা আজমের নালিশের ‘জবাব’ মুহিতের

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে মির্জা আজমের নালিশের পরের দিনই পাট প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যর জবাব দিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি মনে করেন, পাটকে বাঁচিয়ে রাখতে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন- বিজেএমসির বিলোপের বিকল্প নেই।

মির্জা আজমের নালিশের ‘জবাব’ মুহিতের

বুধবার সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে পাট প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মুহিত এ কথা বলেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কল্যাণ সমিতির প্রকাশনা প্রয়াস এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী। এ সময় তার কাছে পাট প্রতিমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন রাখেন সাংবাদিকরা।

সোমবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে পাটের উন্নয়নে বাধা হিসেবে বর্ণনা করেন পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। পরদিন জাতীয় পাট দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে নালিশ দেন মির্জা আজম।

পাট প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে অর্থমন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা আসে বিজেএমসি বন্ধ করার জন্য। বিজেএমসি যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে কৃষক যে উৎসাহী হয়ে পাটচাষ করছে; সম্পূর্ণ সেক্টরটা যদি বেসরকারি খাতের ওপর নির্ভর করে তাহলে দেখা যাবে সিন্ডিকেট করে যখন কৃষকের হাতে পাট থাকবে না। তখন বাজার আর উঠাবে না। কৃষক তার ন্যয্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হবে।’

‘বিজেএমসি কিন্তু টোটাল প্রোডাকশনের ৭ থেকে ৮ শতাংশ পাট কেনে। কিন্তু কৃষকের মূল্যের ১০০ শতাংশ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বিজেএমসি।’

‘সুতরাং বিজেএমসি লোকসান করে, এই অযুহাত দিয়ে অনেক সময় ফতোয়া দেয় আমাদের বন্ধ করে দেয়ার জন্য। এই বন্ধ করলে বাংলাদেশের কৃষক কিন্তু বাঁচবে না।’

অর্থ মন্ত্রণালয় পাটকে প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে গড়িমসি করছে বলেও অভিযোগ করেন মির্জা আজম।

মন্ত্রিসভায় সহকর্মীর এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমাকে নিয়ে পাট প্রতিমন্ত্রী যে মন্তব্য করেছেন, এটা তার ব্যক্তিগত অভিমত। সুতরাং এটার ওপর আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’

‘পাটকে আমরা রিভাইভ (পুনরায় ফিরিয়ে আনা) করতে চাই। পাটের একটা বাজার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু রিভিশনের প্রক্রিয়াটা আমার ভালো লাগছে না। এই প্রক্রিয়ায় ওল্ড বিজেএমসির এক্সিসটেনসের কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। আমি তাদের বলেছি বিজেএমসির কোনো জায়গা নাই নতুন ব্যবস্থায়।’

‘আমরা নতুন ব্যবস্থায় বলেছি পিপিপি (সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব) প্রজেক্ট হবে। সেখানে হোয়াট ব্লাডি সেল দিস বিজেএমসি ডু ইট? ইট সুড বি অ্যাবোলসড। বিজেএমিসি একেবারে বন্ধ করে দেয়া উচিত। এটার কোনো অস্তিত্ব থাকা উচিত নয়। মন্ত্রণালয়ে তাদের সমন্বয়ের জন্য একটা সেল থাকবে। দ্যাটস এনাফ। আমি তাদেরকে অফিসিয়ালি বলেছিবাট দে ডু নট অবলাইজড। বিকজ তারা (পাট মন্ত্রণালয়) বিজেএমসির খপ্পরে পড়েছে। বিজেএমসি বহাল তবিয়তে আছে। তাদের ওই অফিসও ওখানে আদমজিতে আছে।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ইনিশিয়ালি যখন বিজেএমসি করলাম, তখন কয়েক হাজার কোটি টাকা তাদেরকে দিয়েছি।তাদের সমন্ত ব্যাংক লোক ক্লিয়ার করেছি। তার পরেও আনসেটিসফাই, হাঙ্গার ফর মানি, এটাই হচ্ছে বড় সমস্যা।’

মির্জা আজমের নালিশের ‘জবাব’ মুহিতের

২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের অন্যতম অঙ্গীকার ছিল পাটের পুনরুজ্জীবন। বর্তমান সরকার একই মধ্যে বন্ধ করে দেয়া পাঁচটি পাটকল আবার চালু করেছে। সরকারি পাটকলগুলোর খেলাপি ঋণের তিন হাজার ২০০ কোটি টাকা মওকুফও করেছেন অর্থমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই খাত নিয়ে বিশেষ আগ্রহ আছে। তিনি পাটের বহুমুখী ব্যবহারের ওপর তাগিদ দিয়েছেন। কল কারখানার পুরনো যন্ত্রপাতি পাল্টে আধুনিকায়ন করার ঘোষণাও দিয়েছেন শেখ হাসিনা।

এরই মধ্যে পাটের কাপড়, ঘরে ব্যবহারের নানা সামগ্রী, ভিসকস (কাপড়ের উপাদান), আসবাবপত্র এমনকি পলিথিন তৈরি হয়েছে। বিদেশে পাটপণ্য রপ্তানিতে ২০ শতাংশ অনুদানও দেয়া হচ্ছে।

তারপরও বিজেএমসি এখনও লোকসানের বৃত্তেই। পাট খাত নিয় আপনার পরামর্শ কী- জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘পাটের উন্নয়নের জন্য আমার প্রথম পরামর্শ হচ্ছে এবোলিস (বিলুপ্তি) বিজেএমসি। দ্যাট উইল বি গুড ফর দ্য জুট সেক্টর। প্ল্যান শুড বি ফাংসনিং অটোনমাসলি। দ্যাট শুড বি প্রোভাইডেড। সবগুলো পিপিপি। দে শুড ফাংসন অটোনোমাসলি কমার্শিয়াল কনসার্ন, নট লাইক গভর্নমেন্ট অফিস।’

অর্থবিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব মুসলিম চৌধুরী এ সময় বলেন, ‘পাটের সিজনাল অনেক কাজ থাকে, সে জন্য বিজেএমপির ৫০ শতাংশ লোক স্থায়ী আর ৫০ শতাংশ লোক সিজনাল ছিল। কিন্তু বিজেএমসি তাদের ৯০ শতাংশ কর্মী স্থায়ী করে ফেলেছে।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের ম্যানেজমেন্ট হরিবল (বীতিকিচ্ছিরি)।’

জাতীয় পাট দিবসের অনুষ্ঠানে মির্জা আজম ছাড়াও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীও বিজেএমসির লোকসান নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, বিজেএমসি লোকসান বছরে ৮০০ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ৪০০ কোটি টাকায় আনা হয়েছে। আর এই লোকসানের কারণ সরকারের নীতিমালা। বেসরকারি খাতে পাট শ্রমিকদের মজুরির দ্বিগুণেরও বেশি টাকা দেয়া হয় সরকার পাটকলে। আবার যখন অর্থ মন্ত্রণালয় সময় মতো পাট কেনার টাকা ছাড় করে না বলে পরে বেশি টাকা দিয়ে পাট কিনতে হয়।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment